বৃহস্পতিবার, ২৬ Jun ২০২৫, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন
বুড়িগঙ্গায় খেয়াঘাট বন্ধের প্রতিবাদে কেরাণীগঞ্জে বিক্ষোভ
শামীম আহমেদ।,কেরানীগঞ্জ –
নৌনিরাপত্তার দাবিতুলে বুড়িগঙ্গা নদীর সদরঘাট সংলগ্ন খেয়া পারাপারের তিনটি ঘাট বন্ধকরে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। আজ ৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টা থেকে এ ঘাট তিনটি বন্ধকরে দিয়ে সেখানে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য পন্টুণ স্থাপন করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ’র লোকজন। এছাড়া ওইসব ঘাট দিয়ে পারাপারের লোকজনের জন্য পাশর্^বর্তী নাগরমহল পণ্টুন থেকে ওপারের নবাববাড়ি সংলগ্ন বাদামতলী এলাকায় স্থাপিত পন্টুনে পারাপারের জন্য দুটি ওয়টার বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছেন বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। এতেকরে বিপাকে পরেছে ওইসব ঘাট ব্যবহারকারি পথচারি-ব্যবসায়ী ও নৌকা মাঝিরা।
তাই তারা ওই তীরের ঘাট বন্ধের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দিনভর বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেছেন। এতে একাত্মতা প্রকাশ করে যোগ দিয়েছেন কেরাণীগঞ্জের পূর্ব আগানগরস্থ ব্যবসায়ী পল্লীর হাজার হাজার ব্যবসায়ী জনতা। । স্থানীয় সকল ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে এ বিক্ষোভ কর্মসূচীতে স্বত:স্ফুর্ত অংশগ্রহন করেন। এসময় তারা এসকল খেয়াঘাট খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র এ ধরনের কর্মকান্ডের বিরোধিতা করে বিভিন্ন শ্লোগান সম্বলিত প্রতিবাদ মিছিলে ফেটে পরেন। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক বন্ধ করে দেয়া ওইসব খেয়াঘাট খুলে না দেয়া পর্যন্ত এসকল ঘাটের সকল নৌকা বন্ধ রেখে এ ধরনের নানা কর্মসূচী চালিয়ে যাবার পাশপাশি বৃহৎ আন্দোলন কর্মসূচীরও হুমকি প্রদান করেন তারা। পরে সন্ধ্যায় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের অনুরোধে এবং তাদের আশ^াসের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বাধ্যহয় আন্দোলনকারিরা।
জানাযায়,কেরাণীগঞ্জ থেকে নৌকাযোগে রাজধানীতে পারাপারের অত্যন্ত জনবহুল তিনিটি খেয়াঘাট হচ্ছে তেলঘাট,সিমসনঘাট ও ওয়াইজঘাট। এসকল ঘাটদিয়ে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষক, শিক্ষার্থী,অভিভাবক,ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণসহ প্রতিনিয়ত হাজার হাজার লোক নৌকাযোগে কেরাণীগঞ্জ থেকে রাজধানীতে যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু নৌ-নিরাপত্তার দাবি তুলে হঠাৎ করেই এ খেয়াঘাট তিনটি বন্ধ করে দিয়ে সেখানে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য পন্টুণ স্থাপন করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। এতকরে ব্যাপক সমস্যা দেখা দেয় কেরাণীগঞ্জ থেকে রাজধাণীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজে পড়–য়া শিক্ষার্থী, অভিভাবক,ব্যবসায়ী,নৌকা মাঝিসহ হাজার হাজার জনতার।
এব্যপারে জানতে চাওয়া হলে-কেরাণীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি হাজী মো.স্বাধীন শেখ বলেন,বন্ধ করে দেয়া এসকল ঘাটগুলোর সাথে কেরাণীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লীর ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বানিজ্যসহ জীবন-জীবিকার নিবিড় সম্পর্ক জড়িত। তিনি বলেন, বুড়িগঙ্গার কোল ঘেষে গড়ে ওঠা কেরাণীগঞ্জের পূর্ব আগানগরের এ গার্মেন্টস পল্লীটি হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ তৈরী পোষাকের বাজার। এখানকার তৈরী পোষাক রাজধানীসহ দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলেরও তৈরী পোষাকের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। তারমতে এখানে ৩শটি বহুতল মার্কেটে প্রায় ৫হাজার গার্মেন্টস কারখানা ও ১০ হাজার শো-রুম রয়েছে। যেখানে প্রায় ৪ লক্ষাধিক শ্রমিক( নারী-পুরুষ) কাজের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। তিনি বলেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হইতে হাজার হাজার পাইকার তাদের মালামাল ক্রয়ের জন্য তেলঘাট,সিমসনঘাট এবং ওয়াইজঘাট দিয়ে নৌকাযোগে তাদের ক্রয়কৃত মালামাল পারকরে থাকে। কাজেই এসকলঘাট বন্ধ হয়েগেলে আমরা বিপদে পরে যাবো। তাই তিনি এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ সদস্য বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের হস্তক্ষেপ সুদৃষ্টি কামনা করছেন।
কেরাণীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী মো.মুসলিম ঢালী বলেন, আমি স্থানীয় সাংসদ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের একান্ত আস্থাভাজনদের সাথে কথাবলে তাদের আশাসের ভিত্তিতে আন্দোলকারিদের আসস্থ করলে আন্দোলন কারিরা আজকের মত আন্দোলন বন্ধকরে চলে যায়। তবে ঐতিহ্য বাহী এসব নৌকা ঘাটকে বাচিয়ে রেখে এলাকার ঐতিহ্যকে বাচিয়ে রাখার আহবান তার। তিনি বলেন কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট পল্লী¬টি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম তৈরি পোশাকের মার্কেট। নৌকা যোগে এখানকার বহু পাইকার তাদের মালামাল পার করে থাকে। খেয়া ঘাট বন্ধ হয়ে গেলে এ পল্লী¬টি মুখ থুবরে পড়বে। তিনি বলেন যে ঘাট দিয়ে ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু হয়েছে সে সব ঘাটের সাথে আমাদের ব্যবসায়ীদের কোন সম্পৃক্ততা নাই। তাছাড়া ওয়াটার বাসে শুধু যাত্রীই পারাপার হতে পারে। মালামাল সমেত আমাদের ব্যবসায়ীরা পারাপার হতে পারবে না। কাজেই এসকলঘাট বন্ধ হয়েগেলে ঘাট সম্পৃক্তরা সকলেই বিপদে পরে যাবো। তারমতে গার্মেন্ট শিল্পটি বাঁচিয়ে রাখতে হলে এসকল ঘাট বন্ধ করা যাবেনা। তাই তিনিও এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ ,বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ,ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের হস্তক্ষেপ- সুদৃষ্টি ও সুপরামর্শ কামনা করছেন।
কেরাণীগঞ্জ গার্মেন্টস দোকান কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আলী এমরান বলেন, এ সকল ঘাট বন্ধ হয়ে গেলে গার্মেন্টস পল্লীর প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পরবে। কাজেই ঘাট বাচিয়ে রাখতে সকল ধরনের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।#
কেরাণীগঞ্জ থেকে
০৩- ০৯-২০২০ইং ।