মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৫২ পূর্বাহ্ন
নারায়ণগঞ্জে আবারও কি সন্ত্রাসের পুনরুত্থান?আন্ডারওয়ার্ল্ড ‘চম্পক’ ঘিরে জনমনে তীব্র প্রশ্ন।
নিজস্ব প্রতিবেদক।
নাম তার চম্পক খান। পিতা সিরাজুল ইসলাম খান। নারায়ণগঞ্জ সদর এলাকায় তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায় সহজ–সরল, ধর্মপরায়ণ ও ভদ্র মানুষ হিসেবে। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ—এই মুখোশের আড়ালেই লুকিয়ে আছে এক ভয়ংকর আন্ডারওয়ার্ল্ড চরিত্র।
স্থানীয়দের দাবি, চাঁদাবাজি, লুটপাট ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে একসময় নারায়ণগঞ্জে যার নামে ত্রাসের রাজত্ব চলত, সে-ই এই চম্পক। অভিযোগ রয়েছে, প্রকাশ্যে ও গোপনে সে ওসমান পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত ছিল। বিশেষ করে আজমেরী ওসমান—এবং আওয়ামী লীগের সাবেক প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমান-এর ভাতিজা হিসেবে পরিচিত আজমেরী ওসমানের সঙ্গে তার চলাফেরা ছিল চোখে পড়ার মতো।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, এমন কোনো অপকর্ম নেই—যেখানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই চম্পকের সম্পৃক্ততা ছিল না। চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে জমি ও ব্যবসা দখল—সবখানেই তার নাম উচ্চারিত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এখনো সে নাসিম ওসমান পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে আজমেরী ওসমানের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে।
গোপন অর্থায়ন ও সন্ত্রাস পুনর্বাসনের অভিযোগ
স্থানীয় সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক পুনর্গঠনের লক্ষ্যে চম্পক গোপনে আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তার উদ্দেশ্য একটাই—সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিলে নারায়ণগঞ্জে পুনরায় নিজের প্রভাব বিস্তার এবং কোটি কোটি টাকার অবৈধ আয়ের পথ সুগম করা।
ওসমান হাদী হত্যা চেষ্টা মামলায় নাম জড়ানোর গুঞ্জন
এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে, গত ১২ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদী হত্যা চেষ্টার মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিমকে পরোক্ষভাবে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে এই চম্পক। যদিও বিষয়টি তদন্তাধীন, তবে জনমনে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে।
গরিব থেকে শতকোটি টাকার মালিক?
এলাকাবাসীর দাবি, একসময় চম্পক ছিল গরিব-দুঃখী পরিবারের সন্তান। কিন্তু বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় ও ওসমান পরিবারের সান্নিধ্যে থেকে সে নামে–বেনামে প্রায় ১০০ কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। এই সম্পদের উৎস নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
গার্মেন্টস দখলের ভয়াবহ অভিযোগ
৫ আগস্টের আগে, তারই নেতৃত্বে ও প্রভাবে তার বাড়িতে ভাড়া নিয়ে একটি গার্মেন্টস স্থাপন করেন আব্দুল আলিম নামে এক ব্যক্তি। অভিযোগ রয়েছে, পরবর্তীতে অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে চম্পক সেই গার্মেন্টসের বিদেশি মালিকানাধীন সব মালপত্র, আসবাবপত্র ও কোটি টাকার সম্পদ আত্মসাৎ করে। বর্তমানে আব্দুল আলিম ন্যায়বিচারের দাবিতে দিশেহারা হয়ে ঘুরছেন বলে জানা গেছে।
বড় প্রশ্ন: দেশ কি সত্যিই ফ্যাসিবাদমুক্ত?
২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান ও ৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল মানুষ। কিন্তু এতসব অভিযোগ সত্ত্বেও যদি চম্পক খান প্রকাশ্যে হুমকি–ধামকি দিয়ে নারায়ণগঞ্জে প্রভাব বিস্তার করতে পারে—তাহলে জনমনে প্রশ্ন উঠছেই:
দেশ কি সত্যিই স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে?
নাকি আড়ালে আড়ালে পুরনো সন্ত্রাস আবার নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে?