রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:০১ পূর্বাহ্ন
দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জে মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণ রহস্য উদঘাটন, তিন নারী গ্রেফতার, পলাতক মূল হোতা
কেরাণীগঞ্জ সংবাদদাতা।
ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ হাউজিং এলাকায় উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা ভবনে সংঘটিত বিস্ফোরণের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিন নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ঘটনার মূল হোতা শেখ আল আমিন (৩২) এখনও পলাতক রয়েছে।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।
এর আগে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় উন্মুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার একটি একতলা ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত চারজন আহত হন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, ‘বিস্ফোরণের পরপরই আমরা এন্টি টেরোরিজম ইউনিটকে অবহিত করি। পাশাপাশি সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থলকে ক্রাইম সিন হিসেবে চিহ্নিত করে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখ সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে হাসনাবাদ হাউজিং এলাকায় অবস্থিত উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা ভবনে একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাদ্রাসার দুটি কক্ষের দেয়াল ও ছাদের অংশবিশেষ বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখতে পায়।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ আল আমিন (৩২) গত ২০২২ সাল থেকে ভাড়া নেওয়া দুইটি কক্ষে আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে মাদ্রাসাটি পরিচালনা করতেন এবং ভবনের অপর দুইটি কক্ষে তিনি নিজ পরিবারসহ বসবাস করতেন। বিস্ফোরণের ঘটনায় তার তিন সন্তানের মধ্যে উমায়ের (১০) ও আব্দুর রহমান (২) আহত হয়। আহতদের প্রথমে স্থানীয় আদ-দ্বীন হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে পুলিশ বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক দ্রব্য, চারটি ককটেল সদৃশ বস্তু, একটি ল্যাপটপ ও দুটি মনিটর উদ্ধার করে। পরে সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিট, এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত শুরু করে।
তদন্তের একপর্যায়ে শেখ আল আমিনের স্ত্রী আছিয়া (২৮)–কে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার (৩০)–কে হাসনাবাদ এলাকা থেকে এবং আসমানী খাতুন ওরফে আসমা (৩৪)–কে ২৭ ডিসেম্বর ঢাকার বাসাবো এলাকার নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশি অনুসন্ধানে জানা গেছে, পলাতক শেখ আল আমিন এর আগে ২০১৭ ও ২০২০ সালে গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন থানায় মোট সাতটি মামলা রয়েছে। এছাড়া গ্রেফতারকৃত আসমানী খাতুনের নামেও দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনসহ একাধিক ধারায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। পলাতক শেখ আল আমিনকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।