মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৫৯ অপরাহ্ন
পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী আনিকার পাশে দাঁড়াল দৈনিক কালের কণ্ঠ শুভসংঘ।
করোনার কারণে কর্মহীন বাবা। নিজের স্কুলও বন্ধ। অভাবের সংসারে কিছুটা সাহায্য করার উদ্দেশ্যে নিজ স্কুলের সামনেই প্লাস্টিকের খেলনাসামগ্রী নিয়ে বসেছে আনিকা (১২)। একটি জাতীয় দৈনিকে তার এমন ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর কালের কণ্ঠ শুভসংঘ মেয়েটিকে খুঁজে বের করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
গতকাল বুধবার বিকেলে কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পক্ষ থেকে কালের কণ্ঠ’র কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি আলতাফ হোসেন মিন্টু
আনিকার বাবার হাতে এক মাসের খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন।
এখন থেকে মেয়েটির লেখাপড়ার খরচও বহন করবে শুভসংঘ।
আনিকা স্থানীয় চরমিরেরবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়া গ্রামের আলাউদ্দিন শিকদারের মেয়ে সে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে আনিকা সবার বড়।
আলাউদ্দিন কালের কণ্ঠকে জানান, নদীভাঙনে গ্রামের বাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়ায় ১০ বছর আগে পরিবার নিয়ে কেরানীগঞ্জের চরমিরেরবাগ শাহ আলম রাঢ়ির বাড়িতে তিন হাজার টাকায় ঘর ভাড়া নেন। ওই এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালান। করোনার কারণে বর্তমানে কাজ একেবারে নেই বললেই চলে।
আলাউদ্দিন বলেন, সংসারে অভাব-অনটন দেখে একদিন আনিকা ওর খেলনাসামগ্রী নিয়ে স্কুলের সামনে পাটি বিছিয়ে দোকান দিয়ে বসে। বেচাবিক্রি মোটামুটি হওয়ায় সে বায়না ধরে ওকে আরো খেলনা এনে দিতে। এরপর কিস্তিতে টাকা নিয়ে অল্প কিছু খেলনা কিনে দিয়েছেন তিনি। সেই থেকে আনিকার দোকান মোটামুটি ভালোই চলছে।
প্রতিদিন ৫০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এতে দু-তিন শ টাকা লাভ হলে তা দিয়ে তাঁদের সংসার খরচ চলে যায়। তিনি বলেন, ‘অভাবের সংসার, কে চায় নিজের ছোট্ট মেয়েকে দিয়ে দোকান করাতে। সব মা-বাবা চান সন্তান লেখাপড়া করে অনেক বড় হবে। সে রকম আশা আমারও আছে। আমার মেয়ে আনিকা লেখাপড়ায় ভালো। কিন্তু করোনার কারণে আমার সেই স্বপ্ন মনে হয় বিফলে যাবে।’
আনিকা বলে, ‘স্কুল বন্ধ। বান্ধবীদের সঙ্গে খেলা করে সময় কাটাতাম। অভাব-অনটনের সংসারে বাবার কাজ না থাকায় অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতে হয়। একদিন বাজার করতে না পেরে ঘরে বসে বাবাকে কাঁদতে দেখি। বাবার কান্না আমি সহ্য করতে না পেরে নিজের খেলনাপাতি নিয়ে নিজ স্কুলের সামনে দোকান সাজিয়ে বসে পড়ি।’
সে আরো বলে, ‘এখন প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দোকান করি। এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে প্রাইভেট পড়তে যাই। প্রাইভেট পড়ে এসে বান্ধবীদের সঙ্গে খেলা করে সন্ধ্যায় পড়তে বসি। এরপর রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। এভাবেই এখন আমার দিন কেটে যাচ্ছে। সংসারে সাহায্য করতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।’