শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ০৮:৩৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
৩৫০০ পিস ইয়াবাসহ দুই ইয়াবা ব্যাবসায়ীকে আটক করেছে র‍্যাব ১০ যে দেশে গণমাধ্যম স্বাধীন, সে দেশগুলোতে দুর্ভিক্ষ হয়না। অধ্যাপক তামিজী যৌতুক মামলায় পরোয়ানাভুক্ত আসামী রুবেল (২৯) রাজধানীর ডেমরায় র‌্যাব-১০ কর্তৃক গ্রেফতার। ঠাকুরগাঁওয়ে ১৪ মামলায় পুলিশের হাত থেকে ১ আসামি ছিনতাই ! ঠাকুরগাঁওয়ে বিআরটিএ টাকা ছাড়া মেলে না ড্রাইভিং লাইসেন্স ! কেরানীগঞ্জে জনতার সহায়তায় র‍্যাব পরিচয়ে যাত্রীবাহি বাসে ডাকাতির সময় পাঁচ ডাকাত আটক। ঠাকুরগাঁওয়ে গার্ল গাইডস এসোসিয়েশনের মতবিনিময় সভা । ঠাকুরগাঁওয়ে “মির্জা রুহুল আমিন” স্মৃতি টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের সংবাদ সম্মেলন প্রতারণা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী জিল্লুর (৩২) রাজধানীর লালবাগ থানা এলাকায় র‌্যাব-১০ কর্তৃক গ্রেফতার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে মূল্যায়ণের দাবি অব্যাহত। ড. মাহামুদুর রহমান এর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন।

এমপি রুস্তমের বিপরীতে বড় দুই দলে সম্ভাব্য প্রার্থীর ছড়াছড়ি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাঁরা দোয়া চেয়ে এলাকায় পোস্টার ও বিলবোর্ড লাগিয়েছেন। মতবিনিময় আর নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই দলেই মনোনয়নপ্রত্যাশীর ছড়াছড়ি। এমন পরিস্থিতিতে দুই দলেই নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী এলাকায় সরব।

জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে ডা. ফরাজী আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন বলে গুঞ্জন চলছিল। অবশ্য সব গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে তিনি গেল বছরের ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টিতে (এরশাদ) যোগ দেন। এতে আগামী নির্বাচন ঘিরে দলগুলোর আগের সব হিসাব পাল্টে গেছে। কারণ ২০০৮ সালের মতো জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোট হলে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রুস্তম আলী ফরাজীর বেশি।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রুস্তম আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থী মিলে ত্রিমুখী লড়াই হবে।

তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘ঘুষ-দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থেকে জনগণের সেবা করে আসছি। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। তাই আগামী নির্বাচনেও জনগণ আমাকে বিজয়ী করে সেবা করার সুযোগ দেবে।’

পিরোজপুরের সাতটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় মঠবাড়িয়া। একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মঠবাড়িয়া আসনটি জাতীয় সংসদের ১২৯ নম্বর নির্বাচনী এলাকায়। এ আসনে ভোটার প্রায় দুই লাখ।

আওয়ামী লীগ : মঠবাড়িয়ার বর্ষীয়ান নেতা আওয়ামী লীগের তখনকার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ পান্না মিয়া ১৯৯৬ সালে দলীয় কোন্দলের কারণে পরাজিত হন। একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত সওগাতুল আলম সগীরের সহধর্মিণী সাবেক (সংরক্ষিত) সংসদ সদস্য মাহামুদা সওগাত ২০০১ সালে পরাজিত হন। অন্যদিকে সাবেক সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ার হোসেনও ২০১৪ সালে একই কারণে পরাজিত হন। ভেতরে ভেতরে দলের একটি অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. ফরাজীকে সমর্থন দিয়ে জিতিয়ে দেয়।

প্রয়াত জাতীয় নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ পান্না মিয়ার জন্মস্থান মঠবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখনো চরমে। গত উপজেলা নির্বাচনের পর যুবলীগকর্মী হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের মধ্যেও বিবাদ দেখা দিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচন ঘিরে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমান, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহসম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তাজউদ্দিন আহমেদ। গত ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা ও দুর্গাপূজার সময় তরুণ এ দুই নেতা গণসংযোগ চালিয়ে মনোনয়নের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

অন্যদিকে সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. আনোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের আরেক সহসভাপতি ডা. এম নজরুল ইসলাম, মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌরসভার মেয়র রফিউদ্দিন আহমেদ ফেরদৌস, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য সাদিকুর রহমান, সৌদিপ্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ইউসুফ মাহমুদ ফরাজী দলীয় মনোনায়ন পেতে কেন্দ্রে লবিং করছেন। তাঁরা এলাকায় গণসংযোগও চালিয়ে যাচ্ছেন।

দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, টানা তিনবার নির্বাচিত পৌর মেয়র রফিউদ্দিন আহমেদ ফেরদৌস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জনগণের ভালোবাসায় পর পর তিনবার পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। মঠবাড়িয়া আওয়ামী লীগকে সুসংহত করেছি। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করি। নৌকার বিজয় প্রত্যাশায় কাজ করে যাচ্ছি।’

সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলেও দলের কোন্দলের কারণে আমাকে পরিকল্পিতভাবে হারানো হয়েছে। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে হারানো বিজয় এবার সুনিশ্চিত করতে চাই।’

জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এলাকায় এরই মধ্যে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছি। এলাকার মানুষের অধিকার সুরক্ষা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করছি। জাতীয় নির্বাচনে দলনেত্রীর কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। মনোনয়ন পেলে নৌকা প্রতীকের বিজয় সুনিশ্চিত করব।’

জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘স্কুলজীবন থেকেই আমার রাজনীতির হাতেখড়ি। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হয়েও রাজনীতি করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক নানা নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইব। মনোনয়ন না পেলেও যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে দলের স্বার্থে তাঁর পক্ষে কাজ করব।’

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক বিএমএ (বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন) নেতা ডা. এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মঠবাড়িয়ার পাঁচ লাখ মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছি। দলীয় মনোনয়ন পেলে জনগণ ভালোবেসে আমাকে তার প্রতিদান দেবে বলে আশা করি।’

বিএনপি : মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা দলীয় কোন্দলে দিশাহারা। নবম সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে দলের নেতাকর্মীরা।

নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী দলের সাবেক কেন্দ্রীয় পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) শাহজাহান মিলন, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন দুলালের মধ্যে বিরোধ এখনো রয়ে গেছে। তাঁরা দুজনই আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চান। এ ছাড়া বিএনপির মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে তাঁরা হলেন মৎস্যজীবী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম মাহতাব, জেলা বিএনপির বিশেষ সাধারণ সম্পাদক ও দলের মঠবাড়িয়া পৌর শাখার সভাপতি কে এম হুমায়ুন কবির, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক জামাল উদ্দিন খান মিলন, জেলা বিএনপির সদস্য ও মঠবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক সহসভাপতি কামাল উদ্দিন আকন (ভিপি কামাল) ও দলের জেলা কমিটির সদস্য এম এ জি আলিম।

রুহুল আমীন দুলাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপির বিজয় সুনিশ্চিত। আমিই একমাত্র ব্যক্তি, যে হামলা-মামলার শিকার হয়েও দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্র ঘোষিত সব কর্মসূচি পালন করছি। দলীয় মনোনয়ন পেলে আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে পারব।’

কর্নেল (অব.) শাহজাহান মিলন বলেন, ‘নবম সংসদ নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল। এবারও দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আশা করি দলের কোন্দল নিরসন করে বিজয় লাভ করতে পারব।’

কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিগত নব্বইয়ের দশকের ছাত্র আন্দোলন থেকে রাজপথে আছি। গত পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর কাছে মাত্র ৫৬ ভোটে হেরেছি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করি।’

ভিপি কামাল বলেন, ‘রাজনীতি করতে গিয়ে মামলা, হয়রানি ও কারাবরণ করেছি। আমি দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। তবে দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে তাঁর পক্ষেই কাজ করব।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত © সংবাদ সবসময় - ২০২৩
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়ঃ Marshal Host