শুক্রবার, ২৭ Jun ২০২৫, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন
পিবিআই’য়ের অভিযানে, ২ কোটি ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার।
ফয়সাল হাওলাদারঃ।
বিদেশি ব্যাংক থেকে মাত্র ৫% সুদে ৫০ কোটি টাকার সহজ শর্তের লোন করিয়ে দেওয়ার প্রলোভনে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন দিনাজপুর জেলার চিলিবন্দর থানার এম এইচ ব্রিক ফিল্ড এবং অটো রাইস মিলের মালিক মোঃ নুর আমিন শাহ। প্রতারণার শিকার হয়ে তিনি হারিয়েছেন দুই কোটি ছয় লক্ষ টাকা। এ ঘটনায় বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের করে যার মামলায় (নং-১৪, তারিখ-১৮ জুন ২০২৫ খ্রি.) চাঞ্চল্যকর তদন্তের পর ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই প্রতারক’কে গ্রেফতার করেছে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর)।
জানাগেছে, ব্যবসার সম্প্রসারণের জন্য বড় অঙ্কের অর্থ প্রয়োজন হওয়ায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী পরিচিত ব্যবসায়ী খন্দকার শাহ আলমের মাধ্যমে পরিচিত হন প্রতারক মোঃ সফিকুল ইসলাম এবং তার সহযোগী কথিত ব্যাংকার ড. সিপার আহমেদের সাথে। তারা নিজেদের উচ্চপদস্থ ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বলেন, বিদেশি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও লঙ্কা বাংলা ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এবং তারা সহজ শর্তে ৫% সুদে ৫০ কোটি টাকার লোন দিতে পারবেন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে শেরাটন হোটেলে প্রথম বৈঠক হয়, যেখানে কথিত ড. সিপার আহমেদ নিজেকে বেসিক ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন। পরে মহাখালী আমতলীর একটি হোটেলে বসে মোঃ নুর আমিন শাহের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।
এরপর একের পর এক ধাপে ‘ফাইল প্রসেসিং’ ও ‘কমিশন’ বাবদ চক্রটি নগদ, বিকাশ, নগদ একাউন্ট ও ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে মোট ২ কোটি ৬ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। বিশ্বাস অর্জনের জন্য তারা চুক্তিনামা ও বিভিন্ন ব্যাংকের চেকও প্রদান করে। এমনকি প্রতারণার অংশ হিসেবে জাইকা হতে ৭ কোটি টাকার অনুদান এনে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাদীর স্বাক্ষরিত ৮টি চেকও নিয়ে নেয় তারা। ব্যাংক ঋণ না পেয়ে পুনরায় চাপ দিলে চক্রটি বাদী’কে ঢাকায় এনে মহাখালী পর্যটন হোটেলে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক তার স্বাক্ষর নেয় একটি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে এবং দায়ভার অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়।
পিবিআই তদন্তে বেরিয়ে আসে, কথিত ড. সিপার আহমেদ আসলে বেসিক ব্যাংক এবং প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা এবং তার বিরুদ্ধে দুদকে ২৬টি মামলাও বিচারাধীন। আর প্রতারক সফিকুল ইসলাম তার সহযোগী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই প্রতারণা করে আসছে। পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) মামলাটি’কে জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় তদন্ত শুরু করে এবং বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অবশেষে ঢাকা জেলার পল্লবী ও বনানী এলাকা থেকে প্রতারক চক্রের দুই মূল হোতা – মোঃ সফিকুল ইসলাম ও ড. সিপার আহমেদ’কে গ্রেফতার করে। এসময় প্রতারণায় ব্যবহৃত ৪ টি মোবাইল ফোন ও ৮ টি সিম,একটি গাড়ি, ভিকটিমের সাথে কথোপকথনের কল রেকর্ড,ব্যাংক একাউন্ট থেকে লেনদেনের ১ কোটি ২ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকার চেক যার মধ্যে ১৩টি (অগ্রণী, ইসলামী, বেসিক, এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক ইত্যাদি রয়েছে।
অতিরিক্ত আইজিপি পিবিআই জনাব মোঃ মোস্তফা কামালের সঠিক তত্ত্বাবধানে এবং অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তর) জনাব মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নান, পিপিএম-সেবা মহোদয়ের দিক-নির্দেশনায় মামলাটি দক্ষতার সাথে তদন্ত করেন এসআই (নিরস্ত্র) মোঃ সিরাজ উদ্দিন (মোবাইল: ০১৭১৪-৩৪১৫২৮)।
গ্রেফতারকৃত মোঃ সফিকুল ইসলাম (৪২), কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা, আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন, যাতে উঠে এসেছে ভয়াবহ প্রতারণার কাহিনি ও তাদের সাথে জড়িত আরও আসামিদের নাম। কোনো প্রলোভনে প্ররোচিত হয়ে “সহজ লোন”, “কম সুদে বিদেশি ঋণ” কিংবা “অনুদান এনে দেবে” এমন প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়ার আগে অবশ্যই আইনগত পরামর্শ গ্রহণ করুন ও যথাযথ যাচাই- বাছায়ের অনুরোধ জানিয়ে পিবিআই পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, প্রতারক চক্রের এমন সংগঠিত কর্মকাণ্ড দেশের ব্যবসায়িক অঙ্গনে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ ও তদন্ত এই ধরনের অপরাধ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই সকল স্থর থেকে সচেতনতার বিকল্প নেই। তাহলেই এসব প্রতারক’রা মানুষ সাথে প্রতারণার সুযোগ পাবেনা।